লাল পিপঁড়ার ডিমের উপর নির্ভর করছে দুই শতাধিক পরিবারের উপার্জন !

প্রকাশঃ ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০১:৪৫:০৯ | আপডেটঃ ০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০৯:২২:৪৮

সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়িতে লাল পিপঁড়ার ডিম সংগ্রহ করে চলছে দুই শতাধিক পরিবারের সংসার। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এক যুগ ধরে বন জঙ্গল  ঘুরে গাছের ডাল ও পাতার আড়াল থেকে খুঁজে বের করছে লাল পিপঁড়ার ডিম। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, লক্ষ্মীছড়ি, গুইমারা ও পানছড়িতে প্রত্যক্ষভাবে এ পেশায় নিয়োজিত দুই শতাধিক পরিবার।

 

সম্প্রতি এমন একদল শিকারীর সাথে কথা হয় মাটিরাঙ্গার রামশিরা এলাকায়। তাদের সাথে ঘুরে ও কথা বলে জানা যায় রোমাঞ্চকর এ গল্পের।   

 

মাটিরাঙ্গার রামশিরা এলাকার জসিম উদ্দিন জানান, তিন বছর আগেও মানুষের জমিতে কৃষি কাজ করতেন তিতিন। কৃষির কাজ সব সময় না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। পরে একদিন লাল পিপঁড়ার ডিম সংগ্রহের খবর শোনেন। সে থেকে এলাকার অন্যদের সাথে মিলে বন জঙ্গলে গিয়ে সংগ্রহ করতে থাকেন। এখন মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ২ কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। যা বিক্রী করে তার সংসার ভালো চলছে বলেও জানান। 

 

একই এলাকার মো. গফুর মিয়া জানান, গাছের পাতা ও ডাল থেকে উচু উচু বাঁশ ও টুকরির মাধ্যমে ভাঙ্গা হয় পিপঁড়ার বাসা। তা থেকে পাওয়া যায় ডিম। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করলে গড়ে এক কেজির উপর ডিম পাওয়া যায়। তবে ইদানিং আশপাশে পিপঁড়ার বাসা কমে আসছে। তাই দূর দূরান্তে যেতে হচ্ছে।

 

বাসা থেকে সংগৃহীত পিপঁড়াসহ ডিম রাখা হয় এক ধরণের কাগজের প্যাকেটে। দিন শেষে টেবিলের উপর জাল ও কাপড় দিয়ে ডিম থেকে আলাদা করা হয় পিপঁড়া। কয়েক পদ্ধতি ডিম থেকে পিপঁড়া আলাদা করে তা মেপে বুঝিয়ে দেয়া হয় পাইকারদের। প্রতি কেজি পিপঁড়ার ডিম পাইকারদের কাছে বিক্রী করে সংগ্রহকারীরা পান ৫ শ টাকা থেকে ৬ শ টাকা।

 

মাটিরাঙ্গার পাইকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৈশাখ থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত মূলত লাল পিপঁড়ার ডিম ভালো পাওয়া যায়। শীতে গাছের পাতা ঝরা শুরু হলে পিপঁড়ার সংখ্যা কমে যায়। তখন অর্ডার নিলেও পার্টিদের ডিম দিতে হিমশিম খেতে হয়। পিপঁড়ার ডিম মাছের খামারে খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া শৌখিন মাছ শিকারীরা বড়শিতে এ ডিম ব্যবহার করে। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে যে ধরে কিনেন তা থেকে ৫০-১০০ টাকা লাভ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ফেনীর বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রী করেন।

 

জাকির হোসেন নামে আরেক পাইকার জানান, এক যুগ ধরে তিনি এ কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন তার দেখাদেখি অনেকে এ কাজ করছেন। সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতা দেয়া হলে এ খাতে অনেকের আত্মকর্মসংস্থান হবে বলে জানান তিনি।    

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions