বান্দরবানের কাজু বাদাম,পুষ্টিকর ও মানসম্মত হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে

প্রকাশঃ ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০১:৪৪:১২ | আপডেটঃ ০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ০৮:২১:৫৯
কৌশিক দাশ,সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানে উৎপাদিত কাজুবাদাম দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। পুষ্টিকর ও মানসম্মত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিতস্থানে এর প্যাকেটজাত হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা বাড়ছে।

একসময় পার্বত্য জেলা বান্দরবানে এই কাজু বাদামের তেমন কোন কদর না থাকলেও এখন পাহাড়ে অনেক জমিতে কাজু বাদামের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামুল্যে চারা ও সার বিতরণের পাশাপাশি চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করায় চাষীরা এখন অনায়াসে চাষ করছে কাজুবাদাম আর উৎপাদিত বাদাম নিজ বাগানে বিক্রি করে লাভ করছে প্রচুর মুনাফা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবানের ৭টি উপজেলার (সদর,রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম,নাইক্ষ্যংছড়ি) বিভিন্নস্থানে প্রচুর কাজু বাদামের চাষ হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের চাষ বৃদ্ধির জন্য বিনামুল্যে সার,বীজসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

কৃষি বিভাগ আরো জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বান্দরবানে কাজু বাদাদের চাষী ছিল ৪১৩২জন, ফলন্ত ও অফন্ত চারার সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ ৯৬ হাজার ৭শত ৯৩টি আর উৎপাদন হয়েছিল ১৩০৮মেট্রিক টন।

আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৭উপজেলাতে কাজু বাদাদের চাষী বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪৩১৬জন, ফলন্ত ও অফন্ত চারার সংখ্যার ১২লক্ষ ৮৭ হাজার ৭শত ৩৬টি আর উৎপাদন বেড়ে দাড়িয়েছে ১৪০৬ মেট্রিক টন।

এদিকে বান্দরবানের বিভিন্ন বাগান থেকে কাজু বাদাম সংগ্রহ করে বান্দরবানেই প্রক্রিয়াজাত হয়ে সারা দেশের মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় উৎপাদক চাষিদের যেমন বাজার নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি ভোক্তারা কম দামে দেশি কাজুবাদাম হাতের নাগালে পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে আমদানি নির্ভরতা কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে অনেকটাই।

কাজুবাদাম দ্রæত সময়ে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্যাকেটজাত করার লক্ষ্যে বান্দরবান জেলা শহরের পশ্চিম বালাঘাটা এলাকায় একটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তুলেছে দুইজন তরুণ উদ্যোক্তা। কিষাণঘর এাগ্রো নামের এই কাজু বাদাম পক্রিয়াকরণ ও প্যাকেটজাতকরণে এই কারখানাটি চালু হয় ২০১৯ সালের অক্টোবর    সালে। শুরুতে মাত্র হাতেগোনা ২-৪জন শ্রমিক কাজ করলে ও এখন কারখানার আকার বেড়েছে আর তার সাথে শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০জন।

কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ২০থেকে ২৫জন শ্রমিক কাজ করছেন। কাঁচা কাজুবাদাম বাছাই, সেদ্ধকরণ, ভেঙে খোসা আলাদা করাসহ সব প্রক্রিয়ায় যাঁরা অংশ নেন, তাঁদের অধিকাংশই নারী। তাঁরা কেউ দৈনিক পারিশ্রমিকে ও কেউ মাসিক বেতনে কাজ করছেন বলে জানান।

কিষাণঘর এাগ্রোর ব্যবস্থ্যাপনা পরিচালক মো.তারেক জানান, বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলার বাগান থেকে কাজুবাদাম সংগ্রহ করে কারখানায় আনার পর প্রক্রিয়াকরণে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে শুরুতে রোদে শুকাতে হয়, তারপর ছোট ও বড় দানা আলাদা করে ব্রয়লারে সেদ্ধ করতে হয়। সেদ্ধ করা গরম বাদাম ঠান্ডা করে খোসা ছাড়ানো, কাটা, বাছাই ,রোস্টিং শেষে প্যাকেজিংয়ের পর বাজারজাত করার প্রস্তুতি নেয়া হয়।

কিষাণঘর এগ্রোর ব্যবস্থ্যাপনা পরিচালক মো.তারেক আরো জানান, আমাদের এই ছোট কারখানায় বেশিরভাগ নারী শ্রমিক, আর তাদের সকালের নাস্তা,দুপুরের খাবার ও বিকেলর নাস্তা প্রদানের পাশাপাশি কাজের অনুপাতে বিভিন্ন পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। বাজারে কিষাণঘর এর নন রোস্ট এক কেজি প্যাকেট কাজুবাদাম ১৩০০টাকা ও রোস্টেড কাজুবাদাম ১৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পরিচালক মো.তারেক আরো জানান, দিন দিন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের কাজু বাদামের চাহিদা বাড়ছে তবে আমরা বছরে যেই পরিমান কাজু বাদাম প্রয়োজন সেই কাঁচামাল পুজিঁর অভাবে কিনতে না পারায় চাহিদা মেটাতে পারছি না। শুরুতে আমাদের কিষাণঘর এাগ্রোর উৎপাদন ছিল বার্ষিক ৫-৬টন আর এখন ২০২৩ সালে এসে প্রায় ৭শত টন উৎপাদন হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবানের উপ পরিচালক এম,শাহ নেয়াজ বলেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। কৃষি বিভাগ বান্দরবানের কাজুবাদ চাষ বৃদ্ধির জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বান্দরবানের কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করে বান্দরবানসহ সারাদেশের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য জেলা সদরের কিষাণঘর এগ্রো নামে একটি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপিত হয়েছে, আর এই প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপিত হওয়ায় বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলার উৎপাদিত কাজুবাদাম সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত শেষে দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।  

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions